গত ২০–২৪ জুন হয়ে গেল মিলান ফ্যাশন উইক (স্প্রিং/সামার ২০২৬)। জমকালো এই ফ্যাশন শোয়ের শেষে ইতালির জনপ্রিয় ব্র্যান্ড প্রাডা পড়েছে বিতর্কের মুখে। অভিযোগ উঠেছে, ব্র্যান্ডটির নকশা করা স্যান্ডেলে ভারতের ঐতিহ্যবাহী কোলাপুরি চপ্পলের মিল পাওয়া গেছে। কিন্তু এটিকে চামড়ার স্যান্ডেল বলেই চালিয়ে দিয়েছে প্রাডা। আর এতেই খেপেছেন ভারতীয়রা।

এখানেই শেষ নয়, প্রশ্ন উঠেছে যে চপ্পল কিনতে ভারতে ১০০-৫০০ রুপি লাগে, সেটি প্রাডা বিক্রি করছে ১ লাখ ২০ হাজার রুপিতে। এটাও–বা কতটা যৌক্তিক? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভারতীয় ইনফ্লুয়েন্সারদের তোপের মুখে প্রাডা শেষমেশ স্বীকার করেছে, ভুলটা তাদেরই।

• ‘বিএনপির আদর্শ ও রাজনীতির সঙ্গে সন্ত্রাস ও বর্বরতার কোনো সম্পর্ক নেই’

• স্মার্টফোন ব্যাটারি লাইফ বাড়ানোর উপায় জানুন আজই!

• গুগল অ্যাডসেন্স ইনকাম বাড়ানোর গোপন কৌশল: আপনার ব্লগকে মাসিক আয়ের উৎসে পরিণত করুন

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর বক্তব্য, ভারতের মতো দেশে হস্তশিল্প শুধু পণ্য নয়, জাতিগত পরিচয়ের বাহকও। সেই শিল্প ব্যবহার করে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর ফুলেফেঁপে ওঠা ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করছে না। দরকার স্বীকৃতি, অংশীদারত্ব ও সম্মান। শুধু ‘অনুপ্রাণিত’ বলাটা যথেষ্ট নয়।

কোলাপুরি চপ্পলের নামটা এসেছে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের কোলহাপুর জেলা থেকে। হাতে তৈরি বলেই একেকটা চপ্পল একেক রকম। ইউনিসেক্স স্যান্ডেলগুলো তৈরি হয় মূলত মহারাষ্ট্রের কোলহাপুর জেলা ও কর্ণাটকের কিছু অঞ্চলে। অনায়াসে ৫–৭ বছর টেকে একেক জোড়া চপ্পল। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধবও।

এসব চপ্পলের তলা তৈরি হয় মহিষের চামড়া থেকে। কিছু চপ্পলে অনেক রকম বীজও বসানো থাকে। ফলে হাঁটার সময় শব্দ হয়, যা একসময় বনজীবীদের বুনো পশু তাড়ানোর কাজে লাগত। সেই চপ্পলই এখন গরমের দিনে থাকে চাহিদার শীর্ষে। দেখা মেলে ফ্যাশনিস্তা থেকে সাধারণ মানুষের পায়ে পায়ে।

খোলামেলা নকশা হওয়ায় মহারাষ্ট্রের প্রচণ্ড গরমে এই চপ্পল আদর্শ। অথচ এই চপ্পল তৈরি করে যে সম্প্রদায়, তারা একসময় সমাজে নিচু জাত হিসেবে বিবেচিত হতো!

প্রাডার এই ফ্যাশন শোয়ের পর আলোচনা হচ্ছে, বিদেশের র‍্যাম্পে উঠে গেলেও কোলাপুরি চপ্পলের ভিত্তি কিন্তু ভারতের মাটিতে। কোলাপুরি কেবল এক জোড়া জুতা নয়, এটি একটি অঞ্চলের পরিচয়।

তাই মূল উৎসের স্বীকৃতি না দিয়ে এবং কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ ছাড়াই প্রাডা সেটা লঞ্চ করায় ভারতীয়রা খেপেছেন।

কারিগর ও গবেষকদের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় ২০১৯ সালে কোলাপুরি চপ্পল পেয়েছে জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) ট্যাগ, যা দেওয়া হয় ভারতের জিআই আইন, ১৯৯৯-এর অধীনে। তাই বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড হিসেবে প্রাডা কোলাপুরি অনুপ্রাণিত নকশা ব্যবহার করায় বিতর্কে পড়েছে সহসাই। বিতর্কের মুখে বিবিসিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে প্রাডা জানিয়েছে, তারা স্বীকার করে যে এই ডিজাইন ভারতের ঐতিহ্যবাহী জুতা থেকে অনুপ্রাণিত।

তবে কারিগরেরা এখনো অভিযোগ করে যাচ্ছেন, তাঁদের চিরায়ত নকশা থেকে আজ বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলো কোটি টাকা আয় করছে, অথচ তাঁরা রয়ে গেছেন অদৃশ্য ও উপেক্ষিত।

একইভাবে ২০১৫ সালে বিতর্কে জড়ান ফরাসি ডিজাইনার ইসাবেল মারা। তিনি মেক্সিকোর ওয়াহাকা অঞ্চলের আদিবাসী মাইক্স সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এমব্রয়ডারির হুবহু ডিজাইন করা টপ বিক্রি করতে শুরু করেন কারিগরদের কোনো স্বীকৃতি বা লাভ না দিয়েই। বিভিন্ন সময়ে এমন বিতর্কের কারণে এখন ফ্যাশনে নিজস্বতার পাশাপাশি নৈতিকতার চর্চা নিয়েও আলোচনা চলছে দেশে–বিদেশে।